পাঠ্যবইয়ে ভুল: জাফর ইকবালের দায় স্বীকার, তবে…

adminadmin
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৫:৩০ AM, ১৮ জানুয়ারী ২০২৩

এডুকেশনটুডে রিপোর্ট: সপ্তম শ্রেণির ‘বিজ্ঞান, অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ে নকলের যে অভিযোগ উঠেছে তার দায় স্বীকার করেছেন এর লেখক ও সম্পাদক। তারা বইটি আগামী
শিক্ষাবর্ষ থেকে সংশোধন করে দেবেন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো- শিক্ষার্থীরা কি চলতি বছর ‘নকল’ বইটিই পড়বে? না কি যেসব জায়গায় নকলের অভিযোগ এসেছে সেগুলোর সংশোধনী দেয়া হবে? এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)’র দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বইটিতে ভুল তথ্য না থাকলেও নকলের অভিযোগ থাকায় সেগুলোর ভাষাগত সংশোধনী দেয়া হতে পারে। নতুন কারিকুলামে শুরু হওয়া সপ্তম শ্রেণির ‘বিজ্ঞান, অনুসন্ধানী পাঠ’ বইটির বিভিন্ন অংশ nationalgeographic.org ওয়েবসাইট থেকে হুবহু নকল করা হয়েছে। এমন কি বইটির ইংরেজি ভার্সনও প্রশ্নবিদ্ধ। এর দায়িত্বে থাকা ট্রান্সলেটররা গুগল ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে বইটির বিভিন্ন অংশের ভাষান্তর করেছেন। যা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে এর সম্পাদক ও রচয়িতাদের। বইটি সম্পাদনা করেন শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। রচনায় ছিলেন, তিনি সহ পাঁচজন। বাকিরা হলেন- ড. হাসিনা খান, ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান খান, ড. মুশতাক ইবনে আয়ূব এবং রনি বসাক। আর ইংরেজি ভার্সনের ভাষান্তর করেন একেএম আজিজুল হক, রমিজ আহমেদ, মুহাম্মদ আলী এবং মু. সাদেকুর রহমান।

সপ্তম শ্রেণির এ বইটি এবার পরীক্ষামূলক প্রকাশ করে এনসিটিবি। বইটিতে দেখা যায়, তৃতীয় পৃষ্ঠায় ‘জীববৈচিত্র্যের সংজ্ঞা’ ও ‘জীববৈচিত্র্যের উদ্ভব’, পঞ্চম পৃষ্ঠার শুরুতে কিছু অংশ এবং ‘জীবের পারস্পরিক সম্পর্ক’র বর্ণনা, নবম পৃষ্ঠায় ‘জীববৈচিত্র্যের ঝুঁকি ও প্রতিকার’ শীর্ষক অনুচ্ছেদের লেখাগুলো হুবহু নকল করা। https://education. nationalgeographic.org/resource/biodiversity এর থেকে কপি করা বাংলা অনুবাদ। আর ইংরেজি ভার্সনের বইটিতে গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে এর ভাষান্তর করা হয়েছে।
তীব্র সমালোচনার মুখে গতকাল বইটির পাঁচ লেখকের দু’জন এক বিবৃতিতে এর দায় স্বীকার করে নেন। তারা হলেন- ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ড. হাসিনা খান।

অভিযোগটি নজরে এসেছে উল্লেখ করে যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, এই বইয়ের কোনো কোনো অধ্যায়ের অংশবিশেষ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে নিয়ে হুবহু অনুবাদ করে ব্যবহার করা হয়েছে। বইয়ের এই নির্দিষ্ট অংশটুকু এবং ওয়েবসাইটটির একই লেখাটুকু তুলনা করে অভিযোগটি আমাদের কাছে সত্য বলেই প্রতীয়মান হয়েছে।

বিবৃতিতে তারা বলেন, একই পাঠ্যপুস্তক রচনার সঙ্গে অনেকে জড়িত থাকেন, যাদের শ্রম ও নিষ্ঠার ফলাফল হিসেবে বইটি প্রকাশিত হয়। বিশেষত জাতীয় পাঠ্যপুস্তক রচনার ক্ষেত্রে এই সব লেখকের কাছ থেকেই একধরনের দায়িত্বশীলতা আশা করা হয়। সেখানে কোনো একজন লেখকের লেখা নিয়ে এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তা আমাদের টিমের জন্য হতাশার এবং মন খারাপের কারণ হয়। ওই অধ্যায়ের আলোচিত অংশটুকু লেখার দায়িত্বে আমরা দু’জন না থাকলেও সম্পাদক হিসেবে এর দায় আমাদের ওপরও বর্তায়, সেটি আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি। অবশ্যই পরবর্তী সংস্করণে বইটির প্রয়োজনীয় পরিমার্জন করা হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ বছর বইটির পরীক্ষামূলক সংস্করণ চালু হয়েছে এবং সামনের শিক্ষাবর্ষ থেকে এতে যথেষ্ট পরিমার্জন ও সম্পাদনার সুযোগ রয়েছে। কাজেই উল্লিখিত অভিযোগের বাইরেও যেকোনো যৌক্তিক মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হবে এবং সে অনুযায়ী পাঠ্যবইয়ের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা হবে।

এদিকে বইটির যেসব অংশে নকলের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষার্থীরা কি সেটিই পড়বে, না কি এর সংশোধনী দেয়া হবে- জানতে চাওয়া হয় এনসিটিবি’র কাছে। জবাবে এনসিটিবি সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) প্রফেসর লুৎফর রহমান বলেন, এখানে তথ্যগত কোনো ভুল নেই। কপি করা হয়েছে। যা উচিত হয়নি। নতুন বইগুলোতে যেসব ভুল পাওয়া যাবে সব সংশোধন করে দেয়া হবে। এ বিষয়টিরও হয়তো তখন ভাষাগত সংশোধনী দেয়া হবে। নতুন কারিকুলামে আমাদের বইটি এ বছর পরীক্ষামূলক। আগামী বছর থেকে এর প্রথম সংস্করণ বের হবে। এর জন্য আমাদের আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। আশা করছি, চলতি মাসের শেষের দিকে আমরা সব ভুলের একসঙ্গে সংশোধনী দিয়ে দিতে পারবো।

আপনার মতামত লিখুন :