পহেলা জানুয়ারি উৎসব হলেও সব বই হাতে পাবে না শিক্ষার্থীরা

adminadmin
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৬:২৭ AM, ২২ ডিসেম্বর ২০২২

এডুকেশনটুডে রিপোর্ট: কাঁচামালের স্বল্পতা, বকেয়া বিল পরিশোধে জটিলতা ও পাণ্ডুলিপি হাতে পেতে বিলম্ব হওয়াসহ নানা কারণে পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কাজ অন্য বছরের তুলনায় বেশ বিলম্বে শুরু হয়। তখন কেবল মাধ্যমিকের বই ছাপানো হয়। একটা সময় অনিশ্চয়তা দেখা দেয় প্রাইমারির বই ছাপানো নিয়ে। শঙ্কা ছিল পহেলা জানুয়ারির বই উৎসব নিয়েও। তবে বছরের শেষ সময়ে এসে ছাপানোর কাজ পুরোদমে শুরু হলেও উৎসবের আগ পর্যন্ত শতভাগ বই ছাপানো সম্ভব হচ্ছে না। এনসিটিবি জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছে শতভাগ বই পৌঁছানোর ব্যাপারে আশাবাদী। তবে মুদ্রণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্চের আগে কোনোভাবেই শতভাগ বই প্রস্তুত করা সম্ভব নয়। এ ছাড়াও কাঁচামাল সংকটের অজুহাতে নিম্নমানের কাগজ দিয়ে বেশকিছু ছাপাখানার বিরুদ্ধে বই ছাপানোর প্রমাণ পেয়েছে এনসিটিবি। তাই সংশ্লিষ্ট মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছে তারা। নষ্ট করা হয়েছে কয়েক হাজার নতুন বই ও কাগজ। এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য ৩৩ কোটি ৬৬ লাখ বই ছাপানোর উদ্যোগ নেয়া হয়।

গতকাল বুধবার পর্যন্ত ২৩ কোটি বই ছাপানোর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১০ দিনে অবশিষ্ট বই ছাপানো সম্ভব না হলেও ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে তা সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী প্রতিষ্ঠানটি। তবে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে অন্য কথা। কাগজ সংকট ও লোডশেডিংসহ বিভিন্ন কারণে এনসিটিবির টার্গেট পূরণ করতে পারছেন না বলে জানান তারা। বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত কাঁচামালের সংকট ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না ততক্ষণ পর্যন্ত তারা এনসিটিবির বেঁধে দেয়া সময়ে বই সরবরাহ করতে পারবেন না। তারা বলেন, শতভাগ বই প্রস্তুত করে পৌঁছাতে মার্চ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

সমতা প্রেসের মালিক রাকিব শিকদার বলেন, আমরা এক লট অর্ডার পেয়েছি সেটির কাজ শেষ করেছি। এদিকে ডলার সংকটের কারণে বিদেশ থেকে ভার্জিন পাল্প ও কাগজ আমদানি বন্ধ থাকায় পুরনো কাগজ রিসাইকেল করে বই ছাপানো হচ্ছে অনেক ছাপাখানায়। সেক্ষেত্রে বইয়ের কাগজে ৮৫ শতাংশ ব্রাইটনেসের জায়গায় ৮২ শতাংশের অনুমোদন দিয়েছিল এনসিটিবি।

এ সুযোগে অনেক ছাপাখানায় ছাপা হচ্ছে নিম্নমানের বই। অভিযোগ রয়েছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ ব্রাইটনেস ব্যবহার করেছে। তাই এ বিষয়ে নজরদারি বাড়িয়েছে এনসিটিবি। নিম্নমানের বই ছাপানোর অপরাধে রিসাইকেলে কিছুটা ছাড় দিলেও এরপরও যারা নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার করে বই ছাপাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে এনসিটিবি। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ছাপাখানার কয়েক হাজার বই ও কাগজ ধ্বংস করেছে এনসিটিবির মনিটরিং টিম। এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর ফরিদুল ইসলাম বলেন, এটা আমাদের নরমাল প্রক্রিয়া। আমরা প্রতি বছরই বই ডেলিভারির আগে ও পরে কাগজের মান যাচাই করি। এবারো সেই প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে। যে সব বইয়ে কাগজ ও কালির মান রাখা হয়নি সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, অনেক কারণে এবার বই ছাপাতে দেরি হচ্ছে। আমরাও চাই যথা সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে। কারণ নির্ধারিত সময় পার হলে আমাদের জরিমানা গুনতে হয়। কিন্তু বাস্তবতার কারণে চাইলেও এবার যথা সময়ে শতভাগ বই সরবারহ করা যাচ্ছে না। অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। তবে আমরা আশাবাদী পহেলা জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ও প্রাথমিকের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বই সরবরাহ করতে পারবো। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বই উৎসবটা যেন সুন্দরভাবে হয় সে বিষয়ে তিনি আমাদের অনুরোধ করেছেন। আমরা মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। তবে শতভাগ বই প্রস্তুত করে পৌঁছাতে মার্চ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম বলেন, মাধ্যমিকের বই ছাপানোর কাজে আমরা অনেকটা এগিয়ে আছি। ২৪ কোটি বইয়ের মধ্যে আমরা ইতিমধ্যে ১৭ কোটি বই ছাপিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর প্রাইমারির ৯ কোটি ৬৬ লাখ বইয়ের মধ্যেও আমরা ৬ কোটি ছাপিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমরা আশা করছি বাকি কাজ অবশিষ্ট দিনে শেষ হবে। কিছু বাকি থাকলেও সেটি ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে শেষ হবে বলে আমরা আশাবাদী। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, পহেলা জানুয়ারি সুন্দরভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ উৎসব করতে পারবো। বৈশ্বিক মন্দাসহ বিভিন্ন কারণে কাগজ সংকটের কারণে বই ছাপাতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আপনার মতামত লিখুন :